Friday, 30 December 2016

নীরব ভালোবাসা

আমি দিবু ।কেউ আমাকে ভালোবাসে কিনা তা জানিনা ।তবে আমি ৮ম শ্রেনী থেকেই একটি মেয়েকে খুব ভালোবাসি।
নাম তার মুক্তি ।মুক্তি আমার কাছে আমার জীবনের থেকেও বেশি মূল্যবান।তাকে যেমন ভালোবাসি ঠিক তেমনি সম্মানও করি ।কখনো তাকে কুনজরে দেখি নি,এখনো দেখি না । আমার আর মুক্তির পাশাপাশি গ্রাম ।ছোট থেকেই এক স্কুলে পড়াশুনা ।খুব ভালো বন্ধু আমার ।
তিন রাস্তার মোর ,উওরে য়াওয়ার পথটায় আমি আর পূর্ব দিকটায় মুক্তি ,আর স্কুল যেতে হয় দক্ষিনে ।একদিন হঠাত্‍ মুক্তিকে দেখতে পাই ঔ সেই তিন রাস্তার মোরে ।মুক্তি তাঁর সাইকেল থামিয়ে !কি যেন করছে ?
(বিঃদ্রঃআগেই বলে নিচ্ছি দিনাজপুরের মেয়েরা সাইকেলে করে স্কুল,কলেজে যায়)
আমি তখন ৮ম শ্রেনীতে ।মুক্তিও আমার সাথেই পড়ে ।ওকে চিনতাম ।তবে কথা বলতাম না।আজ দেখছি মুক্তির ভিষন বিপদ,তাঁর সাইকেলের চেইন ছিড়ে পিছনের চাকায় প্যাঁচ ধরেছে ।রাস্তায় একা,কেউ থাকলে না হয় আসবে ।ভাগ্যিস আমি পরে গেলাম তার চোঁখে ।না ডাকলে হয়তো যেতামি না ,কারন হলো আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতাম না ।মুক্তি বলে উঠলো দিবু আয় তো একটু ,আমি থামলাম ,গিয়ে দেখি এই অবস্থা ।মুক্তি আমার দিকে চেয়ে আছে ,হয়তো ভাবছে আমি তার জন্য কিছু করবো কিনা ।মুক্তির মুখটা টকটকে লাল হয়ে গেছে আর ঘনঘন চোখের পাতায় চোখের জলকে আগলে ধরছে ।খুব ভালো লাগছিলো তখন মুক্তিকে।আমি তাঁর দিকে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলো বারবার।কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না ,অবশেষ আমার সাইকেল নিয়ে যেতে বললাম স্কুলে ।হুম বেচারি রাজি।চলেও গেল ।আর আমি হাটতে হাটতে এক মামার দোকানে ,ঠিকঠাক করে তারাতারি স্কুলে চলে আসলাম।আমার আসা দেখে বারবার আমার দিকে দেখছে মুক্তি।একটা ক্লাস শেষে আমার কাছে এসে ধন্যবাদ দিয়ে আমার চাবি দিয়ে ওর চাবিটা নিয়ে গেল ।
সেদিন থেকেই মুক্তি আমার সাথে প্রতিদিন কথা বলতো ।কিছু খেলে আমাকে ডেকে খেতে দিত ।একসাথে সেই তিন রাস্তার মোর পর্যন্ত আসতাম ,শুধু তাই নয় স্কুলে যাওয়ার সময়ও তিন রাস্তার মোরে দু'জন দু'জনের জন্য অপেক্ষা করতাম ।অনেক অনেক গল্পে মেতে থাকতাম দুইজনে ।স্কুলে পাশাপাশি বসতাম ,অনেক ঝগড়া করতাম,আমি বই দেখে লিখলে স্যারকে বলে দিত।কিন্তু অন্য কারো কথা বলতো না।তখন খুব হিংসা হতো আমার ।স্যার যখন কান ধরে দাঁড়িয়ে রাখতো তখন মুক্তি আমাকে দেখে বলতো
ও !
ও !
কেমন ?
..প্রতিদিন সে একই কাজ করতো ,,তবু আমি মুক্তির সাথে কথা বলা বাদ দেয় নি ।অনেক রাগ অভিমানে কেটে গেল দুইটি বছর ।দশম শ্রেনীতে আমরা তখন।আমি কোন দিন স্কুলে না আসলে পরের দিন বারবার বলতো ,কাল ক্যান আসিস নি ?আরো ওর অনেক প্রশ্ন ।সত্যি বলতে যেদিন মুক্তিও স্কুলে যেত না তখন আমারও মন খুব খারাপ লাগতো ,তখন মনমরা হয়ে স্কুল পালিয়ে আসতাম বাড়িতে।।কিন্তু মুক্তি এই বছর একটু কম কম স্কুলে আসতো।স্কুলে ক্যান আসতো না এটা বলতে পারি না।দশম শ্রেনীতে ওঠে আগের থেকেও বেশি কথা হতো তবে ফোনে ।।এখন মুক্তি অনেক কম স্কুলে আসছিল ।যতটুকু মনে হয় তাতেই বুঝি সে আমার বড় শুভাকাঙ্কী ।আমার মন বলছে আমি তাকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি ।কিন্তু সে ভালোবাসে কি না, সেটা জানার সুযোগ হয়নি এখনো । সমস্যা হলো আমি তাকে প্রতিনিয়ত অনুভব করি ।তার সঙ্গে কাটানো সময় আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত ।কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলার সময় গুছিয়ে ভালো লাগার কিংবা মনের কথা বলতে পারি না ।ভেবেছিলাম SSC পাশ করে তাকে love you বলবো।যদি না বলতে পারি তবে এইভাবেই নীরবে ভালোবেসে যাব । SSC গেল ,HSC যাচ্ছে তবু i love you বলা হয়ে উঠলো না আজও।আমি এখন কাপ্তাই,আর মুক্তি ঠাকুরগাঁও ।অনেক গল্প হলেও বলা হয়নি আমার মনের কথা গুলি এখনো । কিন্তু মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠতে পারছি না ।এখন অনেক ভয় হয় যদি তাকে প্রপোজ করার পর প্রত্যাখান করে ! তখন কি হবে আমার ??যেমন আছি ঠিক তেমনি থাকি ,তাকে আমি হারাতেও চাই না ।এভাবেই দূর থেকে ভালোবাসবো ।তবে এই দিবু একদিন মুক্তিকে প্রশ্ন করবে , নীরব ভালোবাসা কী ?? দেখি সেই নীরব ভালোবাসার পাখা আকাশে উড়ে কি না ।



লেখাঃদিবাকর দেব(Diba)
Date: 12/05/16

No comments:

Post a Comment