Saturday, 31 December 2016

বাংলার দার্জিলিং

এবার পূজার ছুটিতে ঘুরে এলাম বাংলার দার্জিলিং।অনেক কয়েকবার ভ্রমন ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘুরে এলাম বান্দরবান। বন্ধু আল আমিনের বাসা ছিল এই ভ্রমনের মূল কেন্দ্র বিন্দু।আমরা 5 জন,#আমি,#আল আমিন,#মামুন,#রাকিব ও #কারিব।পূজোতে বাড়ি যাওয়ার প্রোগ্রাম বাতিল করে এসে পরছি বাংলার এক অপরুপ কৃর্তি নাম দিয়েছি আজ তার বাংলার ডার্জিলিং।অনেক আনন্দ,অনেক মজা, তবুও ভয়,উৎকন্ঠা আর রোমাঞ্চে ভরা বাংলার দার্জিলিং বান্দরবান।বন্ধু অনেক তবু ভয় আর উৎকন্ঠা হয় ভ্রমনের সঙ্গি।কেন হবে না,উচু নিচু যে রাস্তা,বিশাল পাহারের গা ঘেষে যাওয়া,মনে হয় এই বুঝি পরে গেলাম।এত্তো বড় পাহার। যেন মোদের মেঘের রাজ্যে বাস।এত্তো এত্তো সুন্দর যা প্রকাশ করার মতো নয়।প্রিয় আপন জনকে এই দৃশ্যের কথা কিভাবে যে বলবো তাই ভাবছি।
আনন্দে একেবারে দিশাহারা সাথে চিৎকার করার প্রবনতা।
প্রকৃতি এতো সুন্দর হয় তা আগে জানা ছিল না।।অক্টোবরে মোটামুটিভাবে পর্যটনের মওসুম শুরু হলেও নভেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চার মাস পর্যটন ব্যবসা চলে রমরমা।অনুকুল আবহাওয়া,বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় স্কুল বন্ধ থাকায় বেড়ানোর একটু আনন্দ মিলে এই সময়।তাই অনেকেরই পছন্দ এ সময়ে বেড়ানোর।আমরা একটু না হয় আগেই গিয়ে ব্যবসার রমরমা শুরুটা করলাম।আপনারা যারা এই বাংলার দার্জিলিং দেখতে আসতে চান,তাদের জন্য কিছু কথা,প্রকৃতির অপরুপ এক মহিমার কথা তুলে ধরছি।আশা করি না এসেও শুনেই অনেক তৃপ্তি পাবেন।এখানে এলে প্রথমেই যেতে পারেন নীলগিরি।পথে শৈলপ্রপাত ও চিম্বুক দেখা হবে।বাহন হিসেবে উওম চান্দের গাড়ি।আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ।দক্ষ চালক না হলে এ পথে গাড়ি চালানো কঠিন।শহর থেকে নীলগিরির দুরত্ব 55 কিলোমিটার।পাহাড়ের পাশ কেটে অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রমে এ পথ তৈরি করেছেন আমাদের সেনাবাহিনি।পথের একপাশে খাড়া পাহাড়,আরেক পাশে গভীর খাদ।চালকের একটু ভুল ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ পরিনতি।তাই আগেই বলেছি ভয়,উৎকন্ঠা,সাহস আর রোমাঞ্চে ভরা এই বাংলার দার্জিলিং।গাড়ির চাকা পিছলে গেলে সোজা কয়েক শ ফুট নিচে ভাবতেই মেরুদন্ডের মাঝখান দিয়ে শীতল রক্তস্রোত বয়ে যায়।পথের পাশে জানা অজানা লতাপাতা আর গাছের সারি।মাথার ওপর নীল আকাশ।দূরে পাহাড় চূড়ায় সাদা মেঘ খেলা করছে।মেঘরা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।আস্তে আস্তে মেঘের রাজ্যে প্রবেশ।মেঘ ধরতে পারি নি তবে মেঘ আমাদের ঘিরে রেখেছিল।মেঘের দেশে অনেক ক্ষুন ভেসে নয় মেঘমালার খেলা দেখছিলাম।আহা কি মজা !! আকাশে বাতাসে মেঘ হয়ে যেন দূর আকাশে ভেসে যাই।বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাথুরে ঝরনা শৈলপ্রপাত।মূল সড়ক থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয় এ ঝরনায়।প্রচুর পানি,খুবই ঠান্ডা।পাহাড়ি ছোট ছোট শিশুরা ঝরনার পানিতে খেলা করে।উপজাতি নারীরা গোসল শেষে কলসি ভরে পানি নিয়ে যায়।ঝরনার পানিতেই পাহাড়িরা সারেন প্রয়োজনীয় রান্নাবান্না।শৈলপ্রপাতে গা ভিজিয়ে খুব তৃপ্তি পেলাম।কি শীতল পরশমনি এই ঝর্নার।অনেক অনেক ভালো ভালো লাগলো।ঝরনার পানি খুব ঠান্ডা।এ পানিতে পা ভিজাতেই শীররজুরে শীতল পরশ বয়ে যায়।বান্দরবানের এতে কাছে এ রকম ঝরনা আছে তা ভাবাই যায় না।বান্দরবান শহর থেকে বাংলার দার্জিলিং চিম্বুকের দূরত্ব 25 কিলোমিটার।ভূমি থেকে 2500 ফুট উচ্চতার এ পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছলে মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায় এখানে।তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের অনেকেই বাংলার দার্জিলিং বলতেই বুঝে নেন চিম্বুককে।পর্যাপ্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে চিম্বুকের সৌন্দর্য ভারতের দার্জিলিংয়ের চেয়ে কোন অংশে কম হতো না।গাড়িতে চড়েই চিম্বুকচূড়ায় ওঠা যায়।তবে বর্ষায় এ সময় খুবুই ঝুঁকিপূর্ন।প্রায় ঘন্টা দুই এক সময় লাগে শহর থেকে নীরগিরিতে যেতে।এখানে দু পাশে গভীর খাদে মেঘরা ভেসে বেড়াচ্ছে।এ দৃশ্য দেখতে আপনাকে খোলা ছাদের চান্দের গাড়িতে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।তবে নীলগিরির চার দিকে সুনসান নীরবতা।শুধু চূড়ায় সেনাক্যাম্পে কর্মরত সেনাসদস্যরা।নীলগিরিতে এ রকম জনহীন পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।নীলগিরির রুপমার্ধুর্য লিখে শেষ করার মতো নয়।ভূমি থেকে এর উচ্চতা ৩ হাজার ফুট।উচ্চাতার কারনে শীত বর্ষায় বান্দরবান বেড়ানোর সবচেয়ে আর্কষনীয় জায়গা এটি।তবে বর্ষায় তা আরো আকর্ষনীয়।এর চারপাশে মেঘরা খেলা করে।এখানে দাঁড়িয়ে নিচে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর অপরুপ সৌন্দর্য দেখা যায়।যারা প্রকৃতির এই খেলা খুব কাছে থেকে দেখতে চান,তারা এসে দেখেই যেতে পারেন।খাবারের জন্য রয়েছে ভালোমানের রেস্টুরেন্ট।এখানে বসে পেটপুরে খেতে খেতে ডানে বাঁয়ে চোখ বুলালে দূর বহুদূরে দেখা যায় দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং,পাহাড়চূড়ার বগা লেক,কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত ও চট্রগ্রাম সমুদ্রবন্দর।আমাদের দেখার সুযোগ হয় নি,তবে দেখার সুযোগ হয়েছে মেঘের।সেই দিনের আকাশটা একটু মেঘলা ছিল।।।এছাড়া রয়েছে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স,যা সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে।এর আসল সৌন্দর্য পাহাড়ঘেরা সর্পিলাকার স্বচ্ছ পানির লেক ও দুটি ঝুলন্ত ব্রিজ।ঝুলন্ত ব্রিজ দুটি লেকের এপার থেকে ওপারে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।এর ওপর দিয়ে যাওয়া দারুন আনন্দের।সন্ধ্যেটা উপভোগ করতে পারেন বান্দরবানের স্বর্গভূতি খ্যাত নীলাচলে।কি শীতল বাতাস!!সন্ধ্যায় আড্ডা দিয়ে দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে উপভোগ করলাম সন্ধ্যেটা।বান্দরবান পুরো শহরটা তখন ছিল আমাদের চোখের সামনেই।টিপ টিপ করে জ্বলছে বাতি,মনে হবে সবেই স্বপ্নের ভ্রান্তি।বন্ধু আমার পুরো শহরটি ঘুড়িয়ে অবশেষে নিয়ে গেল দক্ষিন র্পাবত্য চট্টগ্রামের হাইফাই পূজো মন্ডপে।প্রশংসা না করলেই নয়,সত্যি অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে মন্ডপটি।অবশেষে একটাই কথা বলবো,বান্দরবানের এই প্রাকৃতিক দৃশ্য মুখে বলে প্রকাশ করার মতো নয়। অন্যরকম এক ভ্রমনের অভিজ্ঞতা হলো মাইরি।সন্ধ্যেরও ছায়াতে পাখিরও গানেতে ঘুরিবার পথ ভুলে যাই ই ই,প্রেমে পরছি এক অপরুপ নীলাবর্তি প্রকৃতির,প্রেমে পরতে মন চায় বান্দরবানের এক অপরুপ সুন্দরীর।

No comments:

Post a Comment